দিনাজপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় গ্রেফতার মশিউর রহমান (২২) নামের এক তরুণ স্বেচ্ছাসেবীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি শৌচাগারের দরজায় থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করায় তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে।
জানা যায়, রোববার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে মশিউর রহমান তাঁর এক বন্ধুর আত্মীয়কে রক্তদানের জন্য এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। রক্তদান শেষে ফেরার পথে হাসপাতালের নিচতলায় পরিত্যক্ত টয়লেটের দরজায় জাতির জনকের ছবিটি দেখতে পেয়ে সেটির ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। ক্যাপশনে তিনি ‘বিষয়টা খুব দুঃখজনক’ উল্লেখ করেছিলেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মশিউর নিজেই বঙ্গবন্ধুর ছবিটি শৌচাগারের দরজায় রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন।
যদিও মশিউরের পরিচিতদের দাবি, শৌচাগারের দরজায় বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে সচেতন করতেই মশিউর ওই ছবিটি ফেসবুকে দিয়েছিলেন। এখন তাঁকেই মামলায় জড়িয়ে ফাঁসানো হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের পক্ষে ওয়ার্ডমাস্টার ফারুক উল আলম বাদী হয়ে সোমবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। রাত দুইটায় পুলিশ মশিউরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি মশিউর রহমান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিত্যক্ত টয়লেটের দরজায় জাতির জনকের ছবিটি রেখেছেন। বর্তমান সরকার ও জাতির পিতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্যই তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছেন।
দিনাজপুর জেলা সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা জানায়, ছবিটি পোস্ট করা নিয়ে মশিউরের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে প্রতিবাদ করার জন্য তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার লোকজন তাঁদের সেখানে প্রতিবাদ করতে দেয়নি।
হাসপাতালের পরিচালক কাজী শামীম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অবমাননা করলে তো আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই হবে। সে কোথা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে এসে অসৎ উদ্দেশ্যে সেখানে ছবিটি রেখেছে এবং ফেসবুকে দিয়েছে আমরা জানি না।’ হাসপাতাল পরিচালকের দাবি, ছবিটি যে জায়গায়, সেখান দিয়ে সব সময় মানুষ যাতায়াত করে। ছবিটি ওই জায়গায় থাকলে কারও চোখে পড়ত। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ওই তরুণ কেন সেখানে ছবিটি রেখেছে, তদন্তকারী সংস্থা তা বের করবে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মামলার ভিত্তিতে আসামিকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের পরে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। পুলিশ কাজ করছে।
মশিউর রহমান ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দোগাছি গ্রামের বাসিন্দা। পড়াশোনা করেন দিনাজপুর আদর্শ কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে। থাকেন শহরের লেবুরমোড় এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে। মশিউর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি। মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কাজে যুক্ত। করোনার সময় এবং দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ঈদগাহের জামায়াতে দায়িত্ব পালনে জেলা প্রশাসনের করা স্বেচ্ছাসেবীর তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে।